Thursday, September 12, 2019

বিভিন্ন অসুখে রানী ফুলের ব্যবহার || রানী ফুলের ভেষজ গুণাবলী

রানী ফুল


রানী ফুল ছোট ঝোপ আকৃটির গাছ । এর বৈজ্ঞানিক নাম  Chphea Hywaiian / Cuphea hyssopifolia । এর ইংরেজি নাম : Mexican Heather, False Heather, Elfin Herb, Hawaiian heather, Mexican false heather ইত্যাদি। এই ফুলের বাংলা অন্যান্য নাম : পানিকা, সমাধি ফুল, বঙ্কিম ইত্যাদি।

এই গাছের উচ্চতা দেড় থেকে তিন ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকা সহ দেশের সমতল ভূমির সর্বত্র এই গাছ জন্মে থাকে। এর পাতাগুলো ক্ষুদ্রাকার ও সবুজ রঙের হয়ে থাকে। ডালগুলো গাছের দুদিকে সমান্তরালে ছড়িয়ে থাকে। ফুল্গুলো ছোট ও বেগুনী রঙের। এছাড়াও এটি সাদা এবং আরও কয়েকটি রঙের হয়ে থাকে। এই গাছে বছরের বার মাসই ফুল ফুটে থাকে। এই গাছ বাগানের বেড়া হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

বিভিন্ন অসুখে রানী ফুলের ব্যবহার / রানী ফুলের ভেষজ গুণাবলী / রানী ফুলের ভেষজ গুণাগুণ / রানী ফুলের ভেষজ উপকারিতা :

রানী ফুল গাছের রয়েছে নানা রোগ নিরাময় কারি ভেষজ উপাদান। ভেষজ চিকিৎসকগণ এই গাছ দিয়ে নানা রকম রোগের চিকিৎসা  করে থাকেন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক রানী ফুলের সেই সকল ভেষজ গুনাবলি এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে...

বলবর্ধক করার অন্যতম ভেষজ রানী ফুল :

আমাদের আশপাশে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা শাকসবজি, মাছ, তরকারি, ডিম, দুধ খাওয়ার চেয়ে ওষুধ খেতে বেশি পছন্দ করেন। আর এই ওষুধ খাওয়ার মূল আগ্রহ হচ্ছে, রাতারাতি শক্তি বাড়ানো।
শক্তি বাড়ানোর প্রবল মোহে কিছু লোকজন সালসা, টনিক নামের যেকোনো ধরনের উপকরণই নির্দ্বিধায় গলাধঃকরণ করেন। আর এ অবস্থার সুযোগ নেয় একশ্রেণির লেকচারবাজ ওষুধ বিক্রেতা। এরা শক্তিমত্তার মনোমুগ্ধকর ও কাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন উপমা তুলে ধরে ওষুধ সম্পর্কে ক্রেতাদের মনে দুর্বার আকর্ষণের জন্ম দিতে সমর্থ হয়। এতে দেখা যায়, অনেকেই রাস্তাঘাট থেকে বিভিন্ন টনিক কিনে খাচ্ছেন।

আজকাল অনেক ফার্মেসিতে বলবর্ধক, শক্তিবর্ধক, রক্তবর্ধক বিভিন্ন ধরনের টনিক বিক্রি হয়। এসব ওষুধের তেমন কোনো কার্যকারিতা নেই। মজার ব্যাপার হলো, অনেকেই এসব ওষুধ খাওয়ার পর শক্তি বেড়েছে বলে অনুভব করেন। আসলে পুরো ব্যাপারটাই ভ্রান্ত মানসিক নির্ভরতা প্রসূত।

রানী ফুল  বলবর্ধক ও রোগ প্রতিরোধক। রানী ফুলের সালফার যৌগ রক্তের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায়। শরীরে ইনসুলিন ও হজমশক্তি বাড়াতেও সহায়তা করে এই রানী ফুল ।

চর্মরোগ নিরাময়ে রানী ফুল :

মানব দেহের ত্বকের উপরিভাগে ব্রণ, ফুসকুড়ি, অ্যালার্জি, একজিমা বা চুলকানি ইত্যাদি নানান ধরনের চর্মরোগে হরহামেশাই বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। কখনো কখনো এটি দীর্ঘমেয়াদি আকার ধারণ করে। বছরের সবসময়ই এই রোগ হতে পারে। শীতকালে এই রোগ বেশি দেখা যায়। এ সময় শুষ্ক ত্বক ফেটে যায়, আকান্ত স্থান পুরু হয়ে ওঠে, চুলকানির সৃষ্টি হয় এবং ফুসকুড়ি হতে পারে। শরীরের যে কোনো স্থানেই চর্ম রোগ দেখা দিতে পারে। তবে হাত-পা মুখে বা পেটের ত্বকে এ রোগ বেশি দেখা যায়।
চর্মরোগ অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। কম-বেশি ভুগতে হয় সবাইকে। আর অনেক সময়ই কী করতে হবে সেটা না জানার কারণে দীর্ঘদিন এই সমস্যায় ভুগতে হয়।
এই সমস্যা থেকে পরত্রান দিতে পারে আমাদের অতি পরিচিত গাছ রানি ফুল। যে কোন ধরনের চর্মরোগের অন্যতম ভেষজ হল এই রানী ফুল। চর্ম রোগ থেকে পরিত্রানের জন্য রানী ফুলের পাতা এবং গাছের  রস নিয়মিত কয়েকদিন তিনবেলা দুই- তিন চামচ করে খাবারের পর খেলে এই ধরনের অসস্তিকর রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

পোকামাকড়ের কামড়ের বিষক্রিয়া নষ্ট করতে রানী ফুল :

পোকামাকড় ও মাকড়সা কামড় দিলে ছোটখাট ফোলা হয়, লাল হয়ে যায়, ব্যথা ও চুলকানি হয়। এইসব হালকা প্রতিক্রিয়াগুলো খুবই সাধারণ এবং কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন স্থায়ী হয়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পোকার কামড় বা হুল ফোটানোর ফলে তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বড়দের চেয়ে ছোটদের ক্ষেত্রে এই প্রতিক্রিয়ার প্রভাব বেশি দেখা যায়।
কারো কারো ক্ষেত্রে পোকার কামড়ের ফলে তীব্র অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যার ফলে জীবন আশংকার ও সৃষ্টি হতে পারে।

আর এই বিষক্রিয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে  রানী ফুলের পাতা পেস্ট করে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিলে বিষক্রিয়া এবং ফোলা উভয়ই কমে যাবে।

শরীরের জ্বালা পোড়া কমাতে রানী ফুল :

হাত-পা জ্বালাপোড়া করা প্রচলিত একটি রোগ। পুরুষের তুলনায় মেয়েরা এ রোগের শিকার বেশি হয়ে থাকেন। এতে হাত ও পায়ের উপরিভাগসহ সম্পূর্ণ অংশে জ্বালাপোড়া করতে পারে। এমনকি ব্যথাও হতে পারে।

এ ছাড়া এ ক্ষেত্রে অনেক সময় হাত এবং পায়ের রং পরিবর্তন হয়, অতিরিক্ত ঘাম হয় এবং হাত- পা ফুলে যায়। মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক অনুভূতি ও অবশভাব হয়। তবে চাপ প্রয়োগ করলে কোনো ব্যথা হয় না। সাধারণত রাতের দিকে এই জ্বালাপোড়া বেড়ে যায়।
ভিটামিন বি-এর উপাদান যেমন থায়ামিন (বি-১), পাইরোডোক্রিন (বি-৬), সায়ানোকোবালামিন (বি-১২), নিকোটানিক এসিড ও রাউবোফ্ল্যাভিনের অভাবে হাত-পা জ্বালা এবং ব্যথা করে।

এই সমস্যা থেকে পরিত্রান দিতে পারে এই রানী ফুল গাছ। এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে রানী ফুলের পাতাসহ গাছ রস করে নিয়মিত ১ মাস খেলে হাত এবং পায়ের জ্বালা পোড়া একেবারেই কমে যাবে। এই ভেষজটি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২-৩ চামচ করে অন্তত ১ মাস খেতে হবে।

No comments:

Post a Comment