সন্ধ্যামালতী,
কৃষ্ণকলি
বা সন্ধ্যামণি
বহুবর্ষজীবী
বীরুৎজাতীয়
উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক
নাম: Mirabilis jalapa এর ইংরেজি নাম:4 O;clock Plant,
Marvel of Peru, Beauty of the Night)। এটি হচ্ছে নিকটাগিনাসি
পরিবারের
মিরাবিলিস
গণের একটি সপুষ্পক ঝোপজাতীয়
বীরুৎ। সন্ধ্যামালতি
এরা ১.৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে ও এদের মূল কন্দাল বিশিষ্ট, কান্ড মসৃণ অথবা কিঞ্চিৎ রোমশ, পর্বগুলো
স্ফীত হয়।
এটিকে বাংলাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে বা গৃহে চাষাবাদ করা হয়। এই বীরুৎটি বাড়ির বা বাগানের শোভাবর্ধন
করে মুলত বিকেলের শেষ থেকে। মার্চ ও মে মাস পর্যন্ত ফুল ফোটে এবং আগষ্ট থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে বীজ হয়।
এর আদিনিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। অনেক গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে ব্যাপকভাবে
চাষ হয় এবং ছিটকে পড়া উদ্ভিদ হিসেবেও পাওয়া যায়। বাংলাদেশে
ইহা একটি সাধারণ উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে লাগানো হয়।
বিভিন্ন অসুখে সন্ধ্যামালতীর ব্যবহার:
সন্ধ্যামালতী
প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন রোগের নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে আসছে।
ইহার পাতায় যন্ত্রণা প্রশমনকারী গুণাবলী বিদ্যমান এবং আগুনে পোড়ায়,
কাশি এবং আঙ্গুলহাড়ায়
প্রয়োগ করা হয়। টাটকা পাতার রস স্নিগ্ধকারী
এবং এ্যালার্জিজনিত
চর্মরোগে
ব্যবহৃত হয়।
এর কন্দাল মূল পুরুষের যৌনশক্তি
বর্ধক হিসেবে কাজ করে।
ব্রাজিলীয় ভেষজ ঔষধে ইহার পাতা ও পুষ্প থেকে তৈরি পেষ্ট বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগ যেমন-চুলকানি, এ্যাজমা, দাদ, মেস্তা এবং চর্ম সংক্রমনে
প্রয়োগ করা হয়। শিকড়ের রস কানের ব্যাথা দূর করতে কানের ভেতরে প্রয়োগ করা হয়। এটি প্রসব ত্বরান্বিত
করতে জরায়ুর উত্তেজক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তাহলে চলুন সন্ধ্যামালতীর
কিছু লুকায়িত ভেষজ গুণাগুণ এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেই...
অর্শ রোগে:
তীব্র বেদনাদায়ক এবং জটিল রোগগুলোর মধ্যে অর্শ বা পাইলস হলো একটি। এটি মানুষের মলদ্বারের রোগ। এ রোগে মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরে, চারপাশে বা একপাশে, একটি বা একাধিক, গোলাকৃতি বা সুচাল গুটিকা দেখা দেয়। এ গুটিকাগুলোকে ‘বলি’বা
‘গেজ’ বলা হয়। পায়খানা করার সময় এ বলিগুলো থেকে অভ্যন্তরীণ সমস্যার অনুপাতে কারো অধিক পরিমাণে, কারো স্বল্প পরিমাণে রক্ত যায়। আবার অনেকের রক্ত যায় না।
এই রোগের ক্ষেত্রে কৃষ্ণকলি
গাছের টাটকা শিকড় ত্রিশ গ্রাম একটা মাটির পাত্রে রেখে ১৫০ মিলিলিটার
ঠাণ্ডা পানি দিয়ে আঁচে সিদ্ধ করতে হবে। পানি ফুটে ত্রিশ চল্লিশ মিলিলিটার
পরিমাণ হলে সিদ্ধ পানি
আঁচ থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করতে হবে এবং এই পানি প্রতিদিন ২০ মিলিলিটার
করে সকালে খালি পেটে ও রাতে খাওয়ার পূর্বে খেলে অর্শ রোগে অবশ্যই উপকার পাওয়া যাবে।
শীতের শুরুতে এবং গরমের সময় অনেকেই সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন। সর্দি তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে গেলেও কাশি কিন্তু সহজে ভালো হতে চায় না। সমস্যা হলো—জ্বর নেই, কফ বের হওয়া নেই, বুকে ঘড়ঘড় নেই, কিন্তু খুকখুক কাশি। বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক একটি ব্যাপার। কাশির সঙ্গে কখনো কফ বেরোয় না, কিন্তু একটা অস্বস্তি গলায়-বুকে লেগেই থাকে।
এই
ক্ষেত্রে কৃষ্ণকলি গাছের শুকনা মূল মিহিভাবে গুড়া করে তিন গ্রাম দু-চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল একই পরিমাণে খেলে সর্দি ও কফ কাশি সরে যায়। ওষুধটি চার পাঁচদিন খেতে হবে।
পেট পরিষ্কার করতে:
মজার মজার খাবার খেলেন। খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুরও তুললেন। কিন্তু সমস্যা বাঁধে তখনই যখন হজম ঠিকভাবে হয়
না।
কিংবা পেটে গোলমাল বাঁধে। পেট পরিষ্কার না হলে নষ্ট হয়
খাওয়ার রুচি। তার প্রভাব পড়ে পুরো শরীরের ওপরেই।
পেট পরিষ্কার করতে কৃষ্ণকলি গাছের শুকনা বীজ
দারুন কাজে দেয়।
পেট পরিষ্কার করতে কৃষ্ণকলি গাছের শুকনা বীজ তিন থেকে চার গ্রাম
নিতে হবে। তারপর ভালোভাবে গুঁড়া করে,
সে গুঁড়া রাতে খাওয়া দাওয়ার পর শোয়ার সময় এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানির সাথে খেলে সকালে পায়খানার
সাথে সমস্ত জমে থাকা মল বেরিয়ে পেট পরিষ্কার
হয়ে যাবে।
পুষ্টির অভাবে:
সুষম খাদ্য না খাওয়ার কারণে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। কোন খাবারে কি পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে তা না
জানার কারণে আমরা পুষ্টির অভাবে ভুগি এবং শরীরে নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়।
যেমন- এনিমিয়া, বেরিবেরি,
স্কার্ভি, রিকেট ও
অষ্টিওম্যারেশিয়া, গলগন্ড ইত্যাদি।
শরীরে পুষ্টির অভাব হলে কৃষ্ণকলি গাছের শুকনা শিকড় গুড়া দশ থেকে পনের গ্রাম এক চামচ গাওয়া ঘি দিয়ে ভেজে,
সেটা দিনে একবার করে কিছুদিন খেলে দেহে পুষ্টির অভাব পূরণ হয়ে যায়।
ফোঁড়া ও বাগী ফাটাতে:
ফোড়া থেকেও বাগী প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক। বাগী কুঁচকির নিচে হয়। গরম পানির সেঁক দিলেও বাগী ফাটতে চায় না। এ ক্ষেত্রে কৃষ্ণকলি গাছের পাতা পঞ্চাশ গ্রাম একটা মাটির পাত্রে বাটিতে রেখে তাতে ১০০ মি.লি. পানি দিয়ে অল্প আঁচে জ্বাল দিতে হবে। পানি কমে ১০ থেকে ১৫ মি.লি হলে আঁচ থেকে নামাতে হবে। সে পানিতে তুলা ভিজিয়ে ফেঁড়া এবং বাগীর ওপর পুলটিস দিলে দু- তিন দিনের মধ্যে ফোঁড়া বা বাগী পেকে যায়। তাছাড়া পুলটিস দিলে যন্ত্রণাও
অনেক কম হয়।
No comments:
Post a Comment